মোঃ মামুন: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বহুবার কথা বলেছেন। তিনি কখনো ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কথা বললেও বেশিরভাগ সময় জুন ২০২৬ সালের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলেছেন। তবে উনার বক্তব্য ভালোভাবে শুনলে বুঝবেন উনি কখনোই জোর দিয়ে বলেননি যে জুন২০২৬ এর মধ্যেই নির্বাচন হবে! তিনি বলেছেন হতে পারে! তার মানে নির্বাচন আরও পরেও হতে পারে। আমাদের সেনাবাহিনী প্রধান স্পষ্ট করেই বলেছিলেন ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে এবং সর্বশেষ তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন এবং গতকাল সেনাবাহিনী প্রধান এর অফিসারস্ এ্যড্রেস-এ অন্যান্য কর্মকর্তারাও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিৎ বলে মত দিয়েছেন এবং নির্বাচন এর পর ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার কথা বলেছেন।
সরকার এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তবে আমরা যারা রাজনীতি করি, সাধারণ মানুষের সাথে কাজ করি আমরা দেখি সাধারণ মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। তবে সেক্ষেত্রে ছাত্র প্রতিনিধিরা সংস্কার করার পর নির্বাচনের পক্ষে। যদিও তারা জানে না সংস্কার আসলেই হবে কিনা কিন্তুু তাদের আকাঙ্খা ছাত্রদের মধ্যে থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল সুবিধাজনক অবস্থায় যাওয়ার পর নির্বাচন হোক!
স্পষ্টতই বোঝা যায় সরকার নতুন দলকে সুবিধা করে দেয়ার জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দিচ্ছে। এবং তাদের জন্য সঠিক সময় আসা না পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। তবে ইতোমধ্যে জনগন নতুন দলের নেতাদের কর্মকাণ্ডে হতাশ এবং বিরক্ত! যেই ইতিবাচক পরিবর্তন হওয়া দরকার ছিলো সেটি কিছুই হয়নি বরং তাদের কথাবার্তা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, বক্তব্যের ধরন ঠিক বস্তাপঁচা রাজনীতির ধারায় চলছে! হুমকি-ধমকি, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, সংবিধান নিয়ে, জাতীয় রাজনীতিবিদদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য কোন পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে না বরং আমাদের ভাবিয়ে তোলে প্রতিহিংসার রাজনীতির চাষ হচ্ছে কিনা! তার মধ্যে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বানিজ্য, সচিবালয় কেন্দ্রিক রাজনীতি কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখায় না।
দুঃখজনক নতুন দলের একজন নেতা ১৩৫ টা গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন করে এসে বক্তব্য দিয়েছেন তার চুম্বক অংশ “ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়। আপনার প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করার জনবল এবং সামর্থ্য আপনার যদি না থাকে কিংবা আপনি দেখাতে না পারেন, তাহলে মাঠের রাজনীতিতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। অন্য নেতা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণও আপনাকে গোনায় ধরবে না। কারণ, মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতামুখী।”
তারমানে জনগন আপনার সামর্থ্য দেখতে চায়, লোকবল দেখতে চায়, আর আপনি সেইটা দেখানোর জন্য ১৩৫ টা গাড়ি ভাড়া নিয়ে লোকজনকে আপনার সামর্থ্য দেখাতে চান!! যেই সংস্কার নামক মিথ্যা আশ্বাস আপনারা দেখাচ্ছেন সেটি শুধুই মুখের সংস্কার যা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আপনারা নিজেরাই মানছেন না!
কিন্তুু আপনাদের হাতেই সুযোগ ছিলো পরিবর্তন করার। আপনি বাস বা ট্রেন থেকে নেমে বা দুটি তিনটি গাড়ি নিয়ে এলাকায় গেলে কি মানুষ আপনাকে অবমূল্যায়ন করতো? করলে করতো! কিন্তু পরিবর্তন এর চেষ্টাটা অন্তত মানুষ দেখতো! আপনাদের আরেক নেতা তার এলাকায় গেলে শতশত তোরন নির্মান করে! এগুলো আসলে সেই পুরোনো ধাঁচের রাজনীতি। মনে রাখতে হবে জনগনকে পরিবর্তন করে রাজনীতিবিদরা। রাজনীতিবিদ এর আচরনে ব্যাপক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে জনগনের মনে। সেই সম্ভাবনা আপনারা হেলায় হারালেন! দুঃখজনক!