বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চর বানিয়ারি ইউনিয়নের মুসলিম পাড়া গ্রামে গ্রাম্য শালিস ব্যবস্থা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী হামলা, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ঘর-বাড়ি ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাতে এই হামলায় ৪ জন মারাত্মকভাবে আহত হন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহতদের চিতলমারী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শনিবার সকাল থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়, এবং এ ঘটনায় পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, পুরো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছে।
ঘটনার সূত্রপাত: এ বিষয়ে স্থানীয় দুবাই প্রবাসী শামীম সরদার জানান, কিছুদিন আগে মুসলিম পাড়া গ্রামের আমির হাওলাদারের স্ত্রীকে মারধর করা হয়, যার ফলে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয়। এই বিষয়ে এলাকায় একটি শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তার বাবা ওহাব সরদারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে শালিস সিদ্ধান্ত নেয়, ৮০ হাজার টাকা চিকিৎসা খরচের জন্য আবুল হোসেনকে দিতে হবে এবং এজন্য তাকে সময় বেঁধে দেয়া হয় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
এদিকে, শনিবার আবুল হোসেন পুরো টাকা না দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। বাকী ৩০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকার করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আবুল হোসেনের চাচাতো ভাই রফিক মীর জানান, তারা বেআইনীভাবে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের জন্য নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “ওহাব সরদার হুমকির মুখে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বললেন, ‘এই টাকা তো রাখলাম, কিন্তু বাকিটা না দিলে মামলাও খাবে।’”
এ সময় প্রতিবাদ করতে গিয়ে রফিক মীরের লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে শালিসদার ওহাব সরদার এবং তার সহযোগী আল-অমিন নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রফিক মীরের পক্ষের লোকজনকে ভয়াবহভাবে মারধর করে। এই হামলায় মো. বেল্লাল মীর (৪০), রুস্তুম হাওলাদার (৫৫), ফারুক মীর (৩০), জয়নাল মোল্লা (৬০) সহ আরো অনেকে গুরুতরভাবে আহত হন।
ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা: এছাড়া, পরবর্তী সময়ে সংঘবদ্ধ একটি দল রফিক মীরের বাড়ি, দোকান-পাট এবং অন্যান্য সম্পদে ব্যাপক ভাংচুর এবং লুটপাট চালায়। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এই ঘটনায় পুরো মুসলিম পাড়া গ্রামে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং গ্রামবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পুলিশের অভিযান: চিতলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে সহিংসতার ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করছে এবং এলাকাবাসীকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার ফলে স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসী তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
Leave a Reply