ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টুকে ফের রিমান্ডে নেওয়া হতে পারে। গ্রেফতার ফয়সাল আলী সাহাজী ওরফে শাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের কাছ থেকে তার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো যাচাই করতে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক কর্মকর্তা বুধবার যুগান্তরকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে মিন্টুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই কারাগারে পাঠানো হয়। এখন যেহেতু তার বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া গেছে, এ কারণে তাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হচ্ছে। এ মুহূর্তে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার ঢাকার বাইরে আছেন। তিনি ঢাকার ফিরলে তার পরামর্শক্রমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে এ হত্যা মামলায় কারাবন্দি আওয়ামী লীগ নেতা বাবুসহ অন্য যে কাউকে আবার রিমান্ডে আনা হতে পারে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বাবুর মোবাইল ফোন উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমনকি এ সংক্রান্ত আর কোনো অভিযান নাও হতে পারে। জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবু নিজেই মোবাইল ফোনগুলো পুকুরে ফেলে দেন। এগুলোয় রয়েছে এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের আলামত। পরে তার মোবাইল ফোনগুলো উদ্ধারের জন্য আদালতের অনুমতি নিয়ে ২৬ মে ঝিনাইদহের পুকুরে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ফোনগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
এদিকে ফয়সাল আলী সাহাজী ওরফে শাজী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আসামিকে হাজির করে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়। এ নিয়ে এমপি আনার হত্যায় ডিবির হাতে গ্রেফতার সাত আসামির ছয়জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। তারা সবাই এখন কারাগারে আছেন। জবানবন্দির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এমপি আনার হত্যার ঘাতক ফয়সালকে হার্টের রোগী এবং মোস্তাফিজকে কিডনি রোগী সাজিয়ে ভারতের কলকাতায় নেওয়া হয়।
আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ফয়সাল আলী জানায়, সে পেশায় ট্রাকচালক। খুলনার ফুলতলা উপজেলার আলকা গ্রামের আলাউদ্দিন সাহাজীর ছেলে। চরমপন্থি দলের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর্থিক সহায়তার জন্য সে এবং মোস্তাফিজ গত মার্চে যোগাযোগ করে এমপি হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়ক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে। শিমুল তাদের মোটা অঙ্কের সহায়তার আশ্বাস দেন। পাশপাশি কলকাতায় গিয়ে একটি কাজে অংশগ্রহণের জন্য বলেন। তখন তারা শিমুলকে জানায়, তাদের তো পাসপোর্ট নেই। তারা কীভাবে কলকাতায় যাবে। তখন শিমুল বলেন, ‘এটা নিয়ে তোমাদের চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। পাসপোর্ট এবং ভিসা সবই আমি করিয়ে দেব।’ পরে তারা কলকাতায় যেতে রাজি হয়। সে অনুযায়ী ফয়সাল-মোস্তাফিজের পাসপোর্ট এবং ভিসা তৈরি সংক্রান্ত সব কাজে সহযোগিতা করেন শিমুল ভূঁইয়া।