ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ২ মাস বাড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আরেকটি মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৫ জনের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়ও ২ মাস বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও ওবায়দুল কাদের কীভাবে দেশ ছেড়ে গেলেন তা জানতে চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
এর আগে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১ মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার সেই প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। তবে তা দাখিল করতে পারেনি ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। এর আগেও মামলা দুটির তদন্ত প্রতিবেদন জমার ২ মাস সময় চেয়েছিলেন চিফ প্রসিকিউটর। তখন ১ মাস করে সময় মঞ্জুর করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি এবং ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আলাদাভাবে ২ মাস করে সময় চান চিফ প্রসিকিউটর। দুটি আবেদনই মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওবায়দুল কাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ৩ মাস বাংলাদেশে ছিলেন। এরপরও তিনি কোথায়-কীভাবে ছিলেন এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, তিনি কীভাবে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন-এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, গুম কমিশনের এই তদন্ত প্রতিবেদনে আমরা যেসব অপরাধ পেয়েছি তা ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়েছেন। একসঙ্গে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও গুমসংক্রান্ত যে অপরাধ সেগুলোকে মিলিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত। আমরা ২ মাস সময় চেয়েছি। আদালত ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছিল সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান,
দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এই ১৬ জনসহ এ মামলার আসামি ৪৫ জন।
মামলার শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে এই ১৬ জনকে কারাগারে নেওয়ার উদ্দেশে একে একে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। এ সময় সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রিজন ভ্যানের ভেন্টিলেটর থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জানতে চান, আপনারা ভালো আছেন? আপনারা ভালো থাকলেই ভালো। গণমাধ্যমকর্মীরা জবাবে বলেন, আমরা ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন তো? তখন পলক বলেন, ভাই, বোবা হয়ে আছি, বোবা। আপনারা মুক্ত আছেন তো?
Leave a Reply